বার্তা ডেস্কঃ দেশের সার্বিক উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীর সম্পৃক্ততা বেড়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

সরকারের এ ধরনের উদ্যোগের ফলেই আগামী ৫ বছরে ২৮ সহস্রাধিক নারী উদ্যোক্তা বের হয়ে আসবেন সারাদেশ থেকে। তারা নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে নিতে পারবেন। খবর বাসস।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা- ২০১১। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপর প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে নারীর সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের এক মাইলফলক রচিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা নারী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সাফল্যের সাথে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন নারীরা। কৃষিকাজ থেকে শুরু করে হিমালয়ের সর্ব্বোচ্চ শৃঙ্গে নারীরা উড়িয়েছে বাংলাদেশের বিজয় পতাকা।

বাংলাদেশের ১৩তম স্পিকার একজন নারী। তিনি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল প্রথমবারের মতো ৪৬ বছর বয়সে জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যিনি এশিয়া মহাদেশে দ্বিতীয় নারী স্পিকার এবং বিশ্বে চতুর্থ।

যুগ যুগ ধরে শিক্ষকতাকে নারীর জন্য আদর্শ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকতা পেশায় নারীর অংশগ্রহণ এজন্য সবচেয়ে বেশি। তা সত্বেও বাংলাদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে প্রথমবারের মত একজন নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এ সরকারের আমলেই। ২০১৪ সালের ২ মার্চ ড. ফারজানা ইসলাম  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। নারী জনশক্তিনির্ভর তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত কর্মসূচি দেশে নারীদের দৃঢ় সামাজিক অবস্থানে নিয়ে গেছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতেও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিনাসুদে ঋণ দিয়ে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সহায়তা করা, ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জয়ীতা ফাউন্ডেশন গড়ে তোলা এবং তথ্য ও প্রযুক্তিতে নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে নারীরা আজ চেনা গণ্ডির বাইরেও নিজেদের সাফল্য অর্জন করছে। সরকারি কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সেনসিটিভ বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।

এ ছাড়া সরকারের একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ২০২০ সালের জুনের মধ্যে আরো ৫৬ হাজার ১০০ নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে, যাতে তারা বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন সক্ষম হন।

সরকারি চাকরিতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত নারীর উপস্থিতি বেড়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৬ মার্চ হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরে সচিব পদমর্যাদায় ৭৭ জন কর্মরত আছেন। তার মধ্যে ৮ জন নারী। আর অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদায় ৫১৭ জনের মধ্যে ৮৪ জন নারী রয়েছেন। উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব পদে এই হার কয়েকগুণ বেশি।

দেশের আটটি বিভাগে বিভাগীয় কমিশনারদের মধ্যে এক জন নারী। আর দেশের ৬৪টি জেলায় জেলা প্রশাসক পদে ৬৪ জনের মধ্যে ৬ জন নারী জেলা প্রশাসক সাফল্যের সাথে কাজ করছেন। এ ছাড়াও শিক্ষা বিভাগে শিক্ষা অফিসার পদে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে এবং উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদে নারীদের সবল ও সফল উপস্থিতি লক্ষণীয়।

বর্তমানে দেশে পুলিশ বাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা এক লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৩ জন। সেখানে নারী পুলিশের সংখ্যা ১১ হাজার ৭৬৭ জন। এদের মধ্যে বর্তমানে দুইজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি), চার জন অতিরিক্ত ডিআইজি, ৩৭ জন পুলিশ সুপার, ৯৩ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১২৬ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ১১০ জন পরিদর্শক (নিরস্ত্র), ৬৪৬ জন উপ-পরিদর্শক, ৫৫ জন পুলিশ সার্জেন্ট, ৯২৮ জন সহকারী ইন্সপেক্টর, ২৮ জন নায়েক এবং ৯৩৩৮ জন কনস্টেবল।

নিয়মিত পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি ২০১১ সালে মহিলা পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়। ২৫৮ সদস্যের মহিলা পুলিশ ব্যাটালিয়ন বিমানবন্দর এবং নিরাপত্তা চেক পয়েন্টগুলোতে নিরাপত্তা রক্ষায় সফলভাবে কাজ করছে। দেশে পুলিশ বাহিনীতে কাজ করা ছাড়াও জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে শান্তিরক্ষী হিসেবে অনেক নারী পুলিশ কাজ করে আসছেন। বর্তমানে ৭৭ জন নারী পুলিশ জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত আছেন। মোট ১১০৯ জন নারী পুলিশ এই পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন সম্পন্ন করেছেন। এ ছাড়াও ২০০৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নারী পুলিশকে দেশ ও বিদেশে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সক্ষম করে গড়ে তুলতে কাজ করছে।

নারীর উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি তাদের কাজের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতেও সহায়ক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে ২০১১ সালে জয়িতা ফাউন্ডেশন গড়ে তোলা, মহিলা হোস্টেল নির্মাণ, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন ২০১৫ প্রণয়ন এই উদ্যোগেরই ধারাবাহিকতা।

পাসপোর্টে মায়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে সমাজে নারীর প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আরেকটি ধাপ অতিক্রান্ত হয়েছে।

এ ছাড়াও তৃণমূলের নারীদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশব্যাপী ১২ হাজার ৯৫৬টি পল্লি মাতৃস্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য , পুষ্টি, মা ও শিশুর যত্নসহ যাবতীয় বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ ও সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করা হচ্ছে। বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাসে উন্নীত করা হয়েছে এবং দরিদ্র ও গর্ভবতী মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়া হচ্ছে। জেলাভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৪৩২ জন শিক্ষিত বেকার নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

এ ছাড়াও সরকার নারীর ক্ষমতায়নে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৮ লাখ ২০ হাজার নারীর প্রশিক্ষণ প্রদান, সরকারি চাকরিতে নারী কর্মকর্তার হার ২০২০ সাল নাগাদ ২৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, ২০ থেকে ২৪ বছরের নারীদের স্বাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীতকরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।